সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০২:২৬ পূর্বাহ্ন

হুলিয়া পাল্টেও শেষ রক্ষা হলো না সেই টিকটক সজিবের

হুলিয়া পাল্টেও শেষ রক্ষা হলো না সেই টিকটক সজিবের

স্বদেশ ডেস্ক: বহুরুপী তিনি। মাহাবুব আলম নামটি তার বাবার দেয়া; এসএম সজিব নামটি নিজের উদ্ভাবন; আর বির্তকিত টিকটক অ্যাপসের বদৌলতে এই প্রতারক এখন বনে গেছেন টিকটক সজিব। ৩০ বছর বয়সেই প্রতারণার জালে তিনি আটকে ফেলেছেন বহু তরুণী-কিশোরীকে। সজিব ওই ভিকটিমদের শুধু চরিত্র হননই করেনেনি; সেই দৃশ্য গোপনে ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে দিনের পর দিন তাদের ভোগ করার পাশাপাশি হাতিয়ে নিয়েছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকাও।

সর্বশেষ ভাতিজার জন্মদিনের পার্টিতে নিমন্ত্রণের কথা বলে রাজধানীর পল্লবীর এক তরুণীকে ধর্ষণের পর সেই দৃশ্য গোপনে ভিডিও করেছিলেন টিকটক সজীব। এর পর তা ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে দিনের পর দিন ওই তরুণীকে পাশবিক নির্যাতন ছাড়াও তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে ফেঁসে গেছেন তিনি।

গ্রেপ্তার এড়াতে তার ব্যবহৃত মোবাইল সিম ব্যবহার করিয়েছেন অন্যকে দিয়ে। হুলিয়া পাল্টে (দাড়ী ক্লিনশেভ করে হেয়ার কাট পরিবর্তন করে) নিজ গ্রাম ছেড়ে অন্য এলাকায় গিয়ে করেছিলেন আত্মগোপন। সেখানে ছদ্মবেশে নতুন নাম-পরিচয় ব্যবহার করেও শেষ রক্ষা হয়নি সজিবের।

গত শনিবার ‘পুলিশের উদাসীনতা পল্লবীকে নিয়ে; ভেঙে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয় আমাদের সময়ে। প্রতারক টিকটক সজিব কর্তৃক ভুক্তভোগী তরুণী শাপলাকে (ছদ্মনাম) দিনের পর দিন হুমকি দিয়ে ধর্ষণ ও নির্যাতনের বিষয়টি সবিস্তারে তুলে ধরা হয় ওই প্রতিবেদনে। এর পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গত সোমবার সন্ধ্যায় নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানাধীন পশ্চিম দৌলতপুর গ্রামের নজির আহম্মেদ হাজির বাড়ির একটি কক্ষ থেকে টিকটক সজিবকে গ্রেপ্তার করে পল্লবী থানা পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী থানার এসআই মো. সজিব খানসহ একই থানার এএসআই  মো.আজগর মোল্লা ও মো. আব্দুস সাত্তারের সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম তাকে ধরে ঢাকায় নিয়ে আসেন পরদিন। তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে সজিবের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তিন দিনের রিমান্ড শেষে আজ রোববার টিকটক সজিবকে আদালতে তোলা হবে।

পুলিশ সূত্র জানায়, রিমান্ডে প্রতারণার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন প্রতারক সজিব। জানিয়েছেন, সজিব তার একাধিক ভুয়া ফেসবুক আইডির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করে আসছিলেন। সর্বশেষ ভুক্তভোগী তরুণী ছাড়াও আরও অনেক তরুণীর সাথেও তার এ ধরনের সম্পর্ক রয়েছে। যারা লোক লজ্জার ভয়ে বা সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়ে আইনের দ্বারস্থ হতে পারছেন না। টিকটক সজিবের তথ্যমতে পুলিশ তার ল্যাপটপ এবং ফেসবুক আইডি উদ্ধার করেছে। এ বিষয়ে আজ পল্লবী থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী শাপলা জানান, তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা। তিনি পল্লবীর সেকশন ১১-এর ই-ব্লকের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। ২ বছর আগে মটস পলিটেকনিক ট্রেনিং সেন্টারে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করার সুবাদে টিকটক সজীবের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ভাবির ছেলের জন্মদিনের দাওয়াতের কথা বলে ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে পল্লবীর সেকশন-১২, মুসলিমবাজার ব্লক-এ ২ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর বাসার ষষ্ঠ তলার একটি ফ্ল্যাটে তাকে নিয়ে যায় সজীব ও তার সহযোগী সাদিক। সেখানে ছিলেন সজীবের ভাবি পরিচয়দানকারী অচেনা এক নারী।

শাপলা বলেন, ফ্ল্যাটে ঢুকতেই দরজা বন্ধ করে দেয় তারা। একপর্যায়ে সজীব তাকে বাজে প্রস্তাব দিলে তিনি অসম্মতি জানান। শেষ পর্যন্ত সেদিন তাকে পৈশাচিক কায়দায় একাধিকবার ধর্ষণ করে সজীব। শুধু তাই নয়। গোপনে সেই দৃশ্য ধারণও করে রাখে সে। পরবর্তী সময়ে সজীব শাপলাকে এই বলে হুমকি দেয় যে, ধর্ষণকাণ্ডের কথা কাউকে বললে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব ভিডিও ছেড়ে দেওয়া হবে।

এরপর ধারণকৃত সেই ভিডিও ইন্টারনেটসহ শাপলার আত্মীয়স্বজনের কাছে প্রকাশ করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে এক বছর ধরে বিভিন্ন সময় শাপলাকে ভোগ করে সজীব। একপর্যায়ে শাপলা বিগড়ে গেলে সজীব সেই ভিডিও শাপলার স্বজনদের ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে ছড়িয়ে দেয়। অগত্যা সমাজে সম্মান বাঁচাতে সজীবের সঙ্গে ফের শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য হন শাপলা। এ সময়কালে দুজনের অন্তরঙ্গ কিছু ছবি তুলতেও বাধ্য করা হয় শাপলাকে।

সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট রাত সাড়ে আটটার দিকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে মুসলিমবাজারের ৪৬/৪৭ নম্বর ভবনের নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে শাপলাকে ফের ধর্ষণ করে সজীব। অত্যাচারে অতিষ্ঠ শাপলা একপর্যায়ে ফের বাধা দিলে ধর্ষণের সেই ভিডিও ছেড়ে দেওয়া হয় ইন্টারনেটে। শেষ পর্যন্ত শাপলা বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানান এবং তাদের সহায়তায় গত ১৩ অক্টোবর পল্লবী থানায় মামলা (নম্বর-৩৭) করেন।

শাপলা বলেন, ‘সজীবের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহায্য না পেয়ে একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত আত্মঘাতী হতে পারেননি। ’ টিকটক সজীব গ্রেপ্তার হওয়ার খবরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শাপলা বলেন, ‘আর কোনো মেয়ের যেন এমন সর্বনাশ না হয়, সে লক্ষ্যে টিকটক সজীব ও তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. সজীব খান আমাদের সময়কে জানান, টিকটক সজীব রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তিন দিনের রিমান্ড শেষে সজিবকে আজ রোববার আদালতে পাঠানো হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তার সহযোগীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877